অনলাইন কোর্স কিনে অন্যের সাথে কোর্স শেয়ার করার ক্ষেত্রে ইসলামী নির্দেশনা
অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ের কোর্স ক্রয় করা যায়। কোর্সের শুরুতে বা বিক্রয়ের সময় অনেক সময় বলা হয়ে থাকে যে, "আপনার কোর্সটি অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন না।"
এসব ক্ষেত্রে করণীয় কী?
উত্তরঃ
আমরা কয়েক ধাপে আলোচনা করব:
১. কোনো কোর্সের ব্যাপারে যদি অন্যদেরকে শেয়ার করা নিষেধ করা হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?
২. কোনো কোর্স যদি কয়েকজন মিলে ক্রয় করে, তার হুকুম কী?
৩. কোনো কোর্স যদি ব্যক্তি বিশেষ বা পার্সোনাল কাউকে দেওয়া হয়, তার হুকুম কী?
প্রথম আলোচনা:
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"المسلمون عند شروطهم"
অর্থাৎ, "মুসলিমরা নিজেদের (চুক্তিপত্রের) শর্তসমূহ পালন করতে বাধ্য।"
(সহিহ বুখারি: ৪/৪৫১; মুসতাদরকে হাকিম: ২/৫৭; সুনানে কুবরা বাইহাকী: ৭/২৪৯)
ইমাম বুখারি (রহ.) তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে:
ইবনু 'আওন (রহ.) ইবনু সীরীন (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি তার সওয়ারীর কেরায়াদারকে বলল: "তুমি তোমার সওয়ারী প্রস্তুত রাখ, যদি অমুক দিন আমি তোমার সঙ্গে না যাই, তাহলে তুমি একশ’ দিরহাম পাবে।" কিন্তু সে গেলো না।
কাযী শুরাইহ (রহ.) বলেন:
"যদি কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায়, বিনা চাপে, নিজের উপর কোনো শর্তারোপ করে, তাহলে তা তার উপর আবশ্যক হয়ে যায়।"
আরেকটি বর্ণনায়, এক ব্যক্তি কিছু খাদ্য বিক্রি করল এবং বলল: "আমি যদি বুধবার তোমার নিকট না আসি তবে আমাদের মধ্যে কোনো বেচা-কেনা নেই।"
সে না আসায় কাযী শুরাইহ (রহ.) ক্রেতাকে বললেন:
"তুমি ওয়াদা ভঙ্গ করেছ," এবং ক্রেতার বিপক্ষে ফয়সালা দিলেন।
(সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ২৭৩৬)
এই হাদিস ও আলোচনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়:
কোনো প্রতিষ্ঠান যদি তার কোর্স অন্যদের সাথে শেয়ার করতে নিষেধ করে, তাহলে তা অন্যদেরকে দেয়া যাবে না। বরং, ওয়াদা রক্ষা করা জরুরি।
দ্বিতীয় আলোচনা:
অনেক সময় দেখা যায়, এক ব্যক্তির পক্ষে পুরো কোর্স ক্রয় করা সম্ভব হয় না। তখন তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে কোর্সটি ক্রয় করে।
এতে কোনো সমস্যা নেই।
শায়েখ মুহাম্মদ সালেহ মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন:
"যদি কারো পক্ষে একাকী কোর্সের পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করা কঠিন হয়, তবে সে এক বা দুইজন সঙ্গী যুক্ত করে তাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হয়ে কোর্স ক্রয় করে, তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। তারা সবাই এ থেকে উপকৃত হতে পারবে।"
(islamqa.info, ফাতাওয়া নং: ২৯১৮৩০)
তৃতীয় আলোচনা:
শায়েখ মুহাম্মদ সালেহ মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন:
"কোর্স ফ্রিতে অন্যদের মধ্যে দেওয়া সমস্যা নেই, যদি তা সীমিত কয়েকজনের মধ্যে থাকে এবং সাধারণভাবে ব্যাপক প্রচার না হয় যাতে মালিকের ক্ষতি হয়।"
শায়েখ ইবন উসাইমিন (রহ.) বলেন:
"যদি ব্যক্তি বিশেষকে দেওয়া হয়, তাহলে সমস্যা নেই।
কিন্তু যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে হয়, যেমন টেপ বা সিডি কপি করে বিক্রি করা, তাহলে তা জায়েজ নয়। কারণ এতে অন্য ভাইয়ের হক নষ্ট করা হয়।"
(তা'লিক আ'লা কাফী: ৩/৩৭৩)
মূল কথা:
ক) ব্যবসার উদ্দেশ্যে শেয়ার করলে তা জায়েজ নেই।
খ) সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিলে তা জায়েজ নেই।
গ) সীমিত কিছু ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে, এবং এতে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি না হলে, জায়েজ আছে।
বিশেষ নোট:
➔ ব্যক্তি বিশেষকে কোর্স দেখতে দেওয়া যাবে কিনা, এ নিয়েও ইখতিলাফ আছে।
ইসলামিক ওয়েব, ফাতাওয়া নং: ৪৫৬১৯-এ এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্যক্তিগত মত:
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোর্স ব্যক্তি বিশেষকেও শেয়ার না করাই মাসলেহাতের দাবি।
কারণ, এতে কোর্স নির্মাতাদের কাজের আগ্রহ বজায় থাকবে এবং তাদের টিকে থাকা সহজ হবে। তাই শেয়ার না করাই অন্যের প্রতি কল্যাণের দাবী, তবে সরাসরি হারাম বলা কঠিন।
আল্লাহু আ'লামু বিস সাওয়াব।
তথ্যসূত্র:
১। সহিহ বুখারি: ৪/৪৫১, মুসতাদরক হাকিম: ২/৫৭, সুনানে কুবরা বাইহাকী: ৭/২৪৯
২। সহিহ বুখারির হাদিস নং: ২৭৩৬
৩। ইসলামিক কিউ, ফাতাওয়া নং: ২৯১৮৩০
৪। ইসলামিক কিউ, পূর্বোক্ত ফাতওয়া
৫। তা'লিক আ'লা কাফী: ৩/৩৭৩
ফতোয়া প্রদান করেছেন-
মুফতি আব্দুর রহমান